বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন
জনগণের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা এই পাঁচটি অতি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাপূরণে জন প্রশাসনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্যই বিসিএস (কৃষি), বিসিএস (প্রকৌশল), বিসিএস (শিক্ষা), বিসিএস (চিকিৎসা) ক্যাডার গঠন করা হয়েছে। এদেশের জনপ্রশাসনের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে এটি নিশ্চিত হবে যে, দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রে দুষ্ট ক্ষত সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই ক্যাডারগুলোর কোন নেতিবাচক ভূমিকা কখনোই ছিল না।
ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের ধারণার বাইরে এসে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে নিয়ে ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করা ক্যাডারগুলোর আগ্রাসী তৎপরতায় লাগাম টেনে ধরার জন্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। অথচ এই কমিশনের সুপারিশে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর রাতের নির্বাচনের আয়োজনে যেভাবে জন প্রশাসনকে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি চিরতরে বন্ধের জন্য সুপারিশ প্রণয়ন না করে শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো সরাসরি জনসেবা প্রদানের মতো ক্যাডারের বিলুপ্তির সুপারিশকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে সংবাদপত্রে রিপোর্ট করা হয়েছে।
দেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কালে এদেশে যত স্বৈরশাসন, সামরিক শাসন এসেছে, তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য জনপ্রশাসনের একটি অংশ রীতিমতো দলীয় কর্মীদের মতো সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে। চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে, তার সকল দানবীয় কর্মকাণ্ডে এই অংশটি নির্লজ্জভাবে সহযোগিতা করেছে। জনপ্রশাসনে গতিশীলতা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে হলে কৃত্য পেশাভিত্তিক জনপ্রশাসনের বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একজন ইতিহাস বা সাহিত্য পড়ুয়ার বদলে একজন চিকিৎসক যেমন প্রকৃত অবদান রাখতে পারেন, তেমনি কৃষি মন্ত্রণালয়ে কৃষিবিদ, প্রকৌশল সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ে প্রকৌশলী যে অবদান রাখতে পারেন তা সাধারণ শিক্ষার কেউ রাখতে পারবেন না।
অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, কমিশন যে ১৩টি প্রশ্ন সম্বলিত প্রশ্নমালা মতামতের জন্য উম্মুক্ত করেছিলেন, তাতে কোন ক্যাডার বিলুপ্ত করার জন্য মতামত চাওয়া হয়নি। অথচ অপ্রাসঙ্গিক এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিগত পনের বছরের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এতে দুর্নীতি ও পাচারের প্রায় অর্ধেক অংশই সরকারি কর্মচারীদের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জন প্রশাসনের কোন ক্যাডারের কতজন এই দূর্নীতির তালিকা ও বেগম পাড়ায় বাড়ী বানিয়েছেন এটি প্রকাশ করার দাবি উঠেছে।
এদেশের জনপ্রশাসনকে কার্যকর ও জনবান্ধব করতে হলে কৃত পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয়ের কোন বিকল্প নেই। এই দাবিকে নস্যাৎ করার জন্য বৃহৎ দুটো ক্যাডার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে আলাদা করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে। এই চক্রান্ত সফল হলে কৃষিসহ অন্যান্য বিশেষায়িত ক্যাডারকে বিলুপ্ত করে ব্রিটিশ কলোনিয়াল মানসিকতায় ভবিষ্যতের ফ্যাসিবাদকে সহায়তা করার জন্য একক গোষ্ঠী সৃষ্টির পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। আমরা আশাকরি শিক্ষক নেতৃত্বের এই সরকার এমন অবাস্তব সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করবেন। আমরা নিশ্চিত, কোন রাজনৈতিক সরকার এই কমিশনের এই অবাস্তব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে সম্মত হবে না।