বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন
বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে
অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া
সুশিক্ষককে অনেক গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে। এজন্য মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে হবে। শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা ও আর্থিক নিশ্চয়তা না থাকলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই পেশায় আকৃষ্ট হতে চান না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে মেধাবী ছাত্ররা বিভিন্ন পেশায় চলে যান। তার অন্যতম কারণ শিক্ষকতা পেশায় আর্থিক অস্বচ্ছলতা, চাকুরীর নিরাপত্তাহীনতা আর সামাজিক অমর্যাদা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, দলাদলি, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের ফলে মেধাবীরা এই পেশার প্রতি আগ্রহ দেখাতে চান না। লেখাপড়া জানে না এমন ব্যক্তিরাও অনেক ক্ষেত্রে হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজাধিরাজ। উদাহরণ আছে এক বিদ্যালয়ে এক সদস্য প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এসে বললেন, “আপনি অমুক মাস্টারকে ডাকেন, প্রধান শিক্ষক বললেন কি ব্যাপার, আমাকে বলুন। তখন সদস্য বললেন, অমুক মাস্টার লেখাপড়া জানে না। কারণ, সে পরীক্ষার খাতায় এক ছাত্র কে ২টি ০ (শূণ্য) দিয়েছে। ছাত্র যদি কিছু না জানে তাকে একটি শূণ্য দিত, ২টি শূণ্য সে জেদ করে দিয়েছে এজন্য তাকে শাস্তি দিন।” এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাস করা মেধাবী ছাত্র যদি শিক্ষকতা পেশায় আসে আর তাকে যদি বিদ্যালয় থেকে কোন বেতন না দেওয়া হয়, তাহলে নিজেই কি খাবে আর তার পরিবারকেই বা কি খাওয়াবে? বেতনের সরকারি অংশ পেতে অনেক বিলম্ব হয়। তাইতো শিক্ষকতা পেশায় অনেক ক্ষেত্রেই অনাকাংখিতরা এসে যায়। তাদের দ্বারা কি সুশিক্ষা দেওয়া সম্ভব? অনেক ক্ষেত্রে প্রচলিত আছে ডোনেশান প্রথ্য। এই ডোনেশান প্রথার মাধ্যমে যারা শিক্ষকতা পেশায় আসেন তারা কিভাবে সুশিক্ষা দান করবে? এটা ভাবতে হবে দেশ ও জাতিকে। সুশিক্ষার জন্য চাই সুশিক্ষক। এজন্য থাকবে না কোন বৈষ্যম্য। আমাদের দেশে ৯৮ ভাগ শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার দায়-দায়িত্ব বহন করে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাগুলো। কিন্তু বেরসকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের চেয়ে একই যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল অনেক বেশি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারীরা পরিবার পরিজনের জন্য উৎসব ভাতা পান স্কেলের ২৫%। বাড়ী ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কথা শুনলে তো মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই পেশার প্রতি আরও অনাগ্রহী হয়ে উঠবে। বেসরকারি-সরকারি বৈষ্যম্য দূর করে সমযোগ্যতা ও সমঅভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের একই সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। বর্তমানে এমপিও ভুক্ত বেসরকারি
শিক্ষক কর্মচারীরা সরকার থেকে স্কেলের ১০০% বেতন পান।
শিক্ষকরা ২টি ঈদে ৫০% এবং কর্মচারীরা ১০০% উৎসব ভাতা পান। প্রতিষ্ঠান থেকেও বিভিন্ন ভাতাদি পেয়ে থাকেন। বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি। এজন্য সরকারকে প্রদান করতে হয় প্রতি মাসে ৮৭৩ কোটি ৩০ লক্ষ ৭৬ হাজার ৮ শত ৫০ টাকা মাত্র। ১২ মাসে সরকার কে দিতে হয় ১০৪৭৯ কোটি ৬৯ লক্ষ ২২ হাজার ২শত টাকা মাত্র। প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হলে সরকারকে প্রদান করতে হবে মোট ১৬২৭০ কোটি টাকা। বর্তমান সরকার বেতন বাবদ প্রদান করছে ১০৪৫০ কোটি টাকা। অতিরিক্ত প্রদান করতে হবে ৫৮২০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারের আয় হবে ৫ হাজার ৯০০ শত কোটি টাকা। ডিগ্রী পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষক কর্মচারীদের চাকুরী জাতীয়করণ করলে সরকারের আয় হবে (৫৯০০-৫৮২০)-৮০
কোটি টাকা প্রায়। বর্তমানে যে হারে শিক্ষকরা নির্যাতিত হচ্ছেন এবং চাকুরী হারাচ্ছেন তা ভাষায় বর্ণনা দেওয়া যায় না। রাজনৈতিক দলের লোকেরা অর্থের বিনিময়ে বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় অযোগ্য ব্যক্তিদের চাকুরি দিচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের চাকুরি জাতীয়করণ করতে হবে।।
লেখক: শিক্ষক নেতা, চেয়ারম্যান, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ